আবারো জুটিবদ্ধ সাইফিনা, মানে কি-না সাইফ-কারিনা, আবারো বিশাল বাজেটের
সিনেমা, আবারো সিনেমা মুক্তির আগে ঘটনার ঘনঘটা এবং এতোকিছুর পর আবারো
‘এজেন্ট বিনোদ’ বক্স অফিসে ধপাস! কাপুর খানদানের ছোটো মেয়ে এবং সর্বশেষ
পাতৌদি ‘নবাবের’ জুটিকে নিয়ে মিডিয়ার মাতামাতির কোনো শেষ নেই। অথচ দর্শকদের
কাছেই কেন বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন তারা? এ জুটির এই বছরেই বিয়ের ঘোষণা,
সাইফের নিজের হোম প্রোডাকশন নিয়ে বারবার ব্যর্থতার জালে বন্দী হওয়া; দুই
তারকার বর্তমান বলিউডি ক্যারিয়ারগ্রাফ- সবমিলিয়ে এবারের গ্লিটজের পর্বটি
সাজানো হয়েছে কারিনা কাপুর এবং সাইফ আলি খানের বর্তমান হালহাকিকত নিয়েই।
কারিনা কাপুর- কাপুর খানদানের এই ছোটো রাজকন্যা নিজ যোগ্যতায় বর্তমানে
বলিউডি অভিনেত্রীদের প্রথম সারিতেই অবস্থান করছেন। বলিউডের তিন খানের
সঙ্গেই ১শ কোটি রুপি ব্যবসা করা সিনেমা, গোলমাল টু এবং থ্রি এর মতো বক্স
অফিস মাতানো সিনেমা, হাতে থাকা মাধুর ভাণ্ডারকারের বহুল আলোচিত ‘হিরোইন’-
সব মিলিয়ে বেবোর বৃহস্পতি তুঙ্গে না থাকার কোনো কারণই ছিলো না। উপরন্ত এ
বছরেই বয়ফ্রেন্ড সাইফের সঙ্গে তার বিয়ের সানাই বাজার কথা। এতোকিছুর পরও
কারিনার দিনকাল এখন কেন ভালোভাবে চলছে না?
ওদিকে কারিনার প্রেমিক
পুরুষ সাইফের অবস্থা পুরোই উল্টো। গতবছরই হারিয়েছেন প্রিয় বাবাকে; সালমান
শাহরুখের দাপটে গত বছরটা খুব বেশি ভালো কাটেনি ছোটে নবাবের। ওদিকে বছরের
শুরুতে পাঁচতারা হোটেলে এক অনাবাসী ভারতীয়ের সঙ্গে হাতাহাতি করে
মান-সম্মান নিয়ে টানাটানির মধ্যেও পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। সবমিলিয়ে সাইফের
অবস্থা যেন কাদায় পড়া সেই হাতির মতোই- সুযোগ পেলেই চামচিকেও যাকে লাথি
কষাতে ভোলে না।
একদিকে তিনতিনটি ব্লকবাস্টার হিট সিনেমার পরও বিদ্যা বালানের কাছে গত
বছরের সব পুরস্কার খোয়ানো; অন্যদিকে বয়ফ্রেন্ডের ক্যারিয়ারের এমন শোচনীয়
দশা- কারিনা কাপুরের দিনকাল ভালো না চলারই কথা। কিন্তু এমন দুরবস্থার
মাঝেও সাইফ-কারিনা দুজনই নিজেদের হোম প্রোডাকশন ইল্যুমিনাটি ফিল্মসের
বিশাল বাজেটের সিনেমা ‘এজেন্ট বিনোদ’কে কেন্দ্র করেই বুনে চলেছিলেন
স্বপ্নের জাল। এমনকি নিজেদের বিয়েটাকেও এই সিনেমার জন্য পেছাতে পেছাতে
বছরের শেষের দিকেও টেনে এনেছিলেন তারা। অথচ কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার
মতো করেই যেন তাদেরকে হতাশ করলো ‘এজেন্ট বিনোদ’। সাইফ কারিনার সমস্ত কষ্টে
জল ঢেলে প্রথম দেড় সপ্তাহের বক্স অফিস রিপোর্ট অনুযায়ী সিনেমাটি এখন
এগুচ্ছে ফ্লপ হওয়ার দিকেই।
কিন্তু কেন বারবার এমন হচ্ছে? ২০০৮ এর দেব থেকে শুরু করে, সাইফ-কারিনার
প্রেমের শুরুর সময়কার সিনেমা তাশান, ২০১০ এর কুরবান এবং হালের এজেন্ট
বিনোদ- প্রতিবারই কেন দর্শকের চোখে বিফল এই জুটি? এমনকি অ্যাকশন থ্রিলার
নিয়ে বলিউডে চলতি ট্রেন্ড- সিনেমাটি সবদিক থেকেই তার অনুসারী হওয়ার পরও কেন
এমন ব্যর্থতা? শ্রীরাম রাঘবন পরিচালিত এই এজেন্ট বিনোদকে বলা হচ্ছিল
বলিউডি জেমস বন্ড। সিনেমার সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন প্রীতম। তার সুরারোপিত
সিনেমার আইটেম গান ‘দিল মেরা মুফত কা’, ‘পেয়ার কি পুঙ্গি’ এবং ‘আই উইল ডু
দ্যা টকিং টুনাইট’ জনপ্রিয়ও হয়েছে ব্যাপকভাবে। গত বছরের সুপারহিট ছাম্মাক
ছাল্লোর পর এ বছর মুজরা নাচের ‘দিল মেরা মুফত কা’ দিয়েও বাজিমাত করেছেন
কারিনা। সবমিলিয়ে সবাই ধারণা করছিলেন, ষাট কোটি রুপি বাজেটের এই সিনেমাটি
অন্ততপক্ষে ১শ কোটির ওপরে ব্যবসা করবে। আর সেরকম বিশ্বাস থেকেই এটিকে
সিঙ্গেল এবং মাল্টিপ্লেক্স দু’ধরনের সিনেমা হলেই মুক্তি দেওয়া হয়েছিলো। অথচ
মুক্তির প্রথম সপ্তাহে এজেন্ট বিনোদের আয় মোটে সাড়ে ৩৮ কোটি রুপি। এমনকি
কোনো বড় তারকা বিহীন অল্প বাজেটের সিনেমা ব্লাড মানিকেও দর্শকেরা এরচেয়ে
বেশী প্রাধান্য দিচ্ছে।
বলিউড বিশেষজ্ঞদের মতে, চক চক করলেই যেমন
সোনা হয়না; তেমনি বিশাল বাজেট, বড় বড় তারকা, চমকে ঠাসা আইটেম গান থাকলেই
কেবল সিনেমা হিট হয় না! দর্শকদের কাছে সিনেমা হিট করার জন্য দরকার হয়
জমজমাট গল্প, অসাধারণ পরিচালনা এবং অভিনয়ের মুন্সিয়ানা। সাইফ-কারিনা মিলে
শেষের কাজটি দারুণভাবে সম্পন্ন করলেও প্রথম দুটি ক্ষেত্রেই চরমভাবে ব্যর্থ
এজেন্ট বিনোদ।