আবদুর রহিম হারমাছি
প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
ঢাকা, জুন ০৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে সব দিক সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যার ফলে বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ রাখতে গিয়ে ৫২ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকছে।
১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার এই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও। তবে তাদের সঙ্গে মহাজোট শরিক দলগুলোর কণ্ঠেও এর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়ের সুর দেখা গেছে। অর্থনীতিবিদরাও বাস্তবায়নকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
এই বাজেটে সার্বিক প্রবৃদ্ধির হার ১ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশ কমিয়ে আনার আশা করা হয়েছে। যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, যাতে গ্রামের দরিদ্র্য মানুষের খুশি হওয়ার উপাদান রয়েছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যের কথাও বলা হয়েছে। দেশীয় শিল্প সংরক্ষণে রয়েছে নানা পদক্ষেপ।
অন্যদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছর আগে দেওয়া এই বাজেটে কালো টাকা ঢালাওভাবে সাদা করার সুযোগ রাখার প্রস্তাব রেখেছেন অর্থমন্ত্রী, যার সমালোচনা ছিল দীর্ঘদিন ধরে; এমনকি অর্থমন্ত্রী নিজেকে এর বিরোধী বলে দাবি করলেও তারই স্বীকারোক্তি- অনেক কিছুর সঙ্গেই সমঝোতা করতে হয়।
বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী, যা চলতি অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার আশা করা হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটের সঙ্গে চলতি বা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। ২০১১-১২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, তা কমিয়ে ১ লাখ ৬১ হাজার ২১৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
গত কয়েকবারের মতো বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতেই বাজেট উপস্থাপন করেন মুহিত। ছিলেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মহাজোট শরিক দলগুলোর নেতারা।
অর্থমন্ত্রী সংসদ অধিবেশনে উপস্থাপনের কিছু সময় আগেই সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই বাজেট অনুমোদন হয়।
বরাবর অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার পুস্তিকায় আলাদা কোনো শিরোনাম না থাকলেও এবার তাতে ‘তিনটি বছরের খতিয়ান : আগামীর পথ রচনা’ এই শিরোনাম দেখে যে কেউ নির্বাচনী বাজেটের গন্ধ খুঁজতে পারেন। ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সরাসরিই বলেছেন, এটি নির্বাচনমুখী বাজেট।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে মোট বরাদ্দের ২৪ দশমিক ২ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়িয়ে তাতে প্রথমবারের মতো অনগ্রসর জনগোষ্ঠী দলিত, হরিজন, বেদে ও হিজড়াদের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
মুহিত বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি, দেশের যে সব জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে, তাদের সেখান থেকে তুলে আনতে।”
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের খুশি রাখতে দেশীয় শিল্প রক্ষায় নানা পদক্ষেপ রয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাবও রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন বাজেটে দেশীয় শিল্পকে যথেষ্ট সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, এটা খুবই ইতিবাচক। অন্যদিকে সামাজিক সুরক্ষা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নারীদের উন্নয়নেও বরাদ্দ বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
দীর্ঘ বাজেট বক্তৃতায় কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে কিছুই বলেননি অর্থমন্ত্রী। তবে বাজেট বক্তৃতার শেষে তিনি সংসদে যে অর্থ বিল উপস্থাপন করেছেন, তাতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগের কথা বলা হয়েছে।
এতে কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ১০ শতাংশ হারে জরিমানা দিয়ে যে কোনো খাতে কালো টাকা সাদা করা যাবে।
এই পদক্ষেপ অনেককে খুশি করলেও সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের বক্তব্য, নির্বাচনের আগে এটি দুর্নীতির কাছে শাসক দলের ‘রাজনৈতিক আত্মসমর্পণ’।
অর্থমন্ত্রীর ইচ্ছা ছিল বাজেটের আকার আরো বড় করার, কিন্তু সাধ্য যে ছিল না- তা নিজেই স্বীকার করেছেন।
বাজেট বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আমি চুপিচুপি বলি, আমার ইচ্ছা ছিল ২ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেব। কিন্তু সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে তা না করতে পেরে ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছি।”
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান হিসেবে ধরলে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৬ হাজার ২৪ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে অনুদানব্যতীত ঘাটতি ছিল ৪৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৪৬ হাজার ২২৮ কোটি টাকা করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ১০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা নেওয়া হবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে আসবে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে নিট ঋণ নেওয়া হবে ১২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর বৈদেশিক উৎস থেকে ২০ হাহার ৩৯৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা যাবে আগের নেওয়া ঋণ সুদ-আসলে পরিশোধে।
গত অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও বছর শেষে তা ২৯ হাজার ১১৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
চলতি অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণের সমালোচনা করে আসছিল বিরোধী দলসহ ব্যবসায়ী মহলও। তাদের বক্তব্য, সরকার ঋণ বেশি নেওয়ায় বেসরকারি খাত যথেষ্ট অর্থ পাচ্ছে না।
ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎসের দিকে সরকারের এই নজর ভালো চোখে দেখছে না ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা। বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রার প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রীর কাছে।
ঘোষিত বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, এই বাজেট বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য । অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন বলেছেন, নতুন বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য।
মির্জ্জা আজিজের সংশয় বাজেটের অর্থায়ন নিয়ে। তার মতে, অর্থমন্ত্রী বাজেটে যে সব উৎস থেকে অর্থ আসবে বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, সে সব খাত থেকে প্রত্যাশিত অর্থ আসবে না।
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মির্জ্জা আজিজ।
চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ শতাংশ। অবশ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অর্থবছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাব ধরে জিডিপির যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার ধারণা দেওয়া হয়েছে।
ফরাসউদ্দিন বাজেটের সব দিকের প্রশংসা করলেও সব রপ্তানি পণ্যের উৎস করের হার বাড়িয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখার বিরোধিতা করেছেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমও এই হার পুনর্বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের ভাষায়- নতুন বাজেটে সুসংবাদ বা দুঃসংবাদ দুটোর কোনোটিই নেই। তার মতে, ধারাবাহিকতা রক্ষার একটি বাজেটই দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী; যা কি না নির্বাচনমুখী মনে করছেন মহাজোটের আরেক নেতা এরশাদ।
প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক
ঢাকা, জুন ০৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে সব দিক সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যার ফলে বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ রাখতে গিয়ে ৫২ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকছে।
১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার এই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপিও। তবে তাদের সঙ্গে মহাজোট শরিক দলগুলোর কণ্ঠেও এর বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়ের সুর দেখা গেছে। অর্থনীতিবিদরাও বাস্তবায়নকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
এই বাজেটে সার্বিক প্রবৃদ্ধির হার ১ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশ কমিয়ে আনার আশা করা হয়েছে। যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, যাতে গ্রামের দরিদ্র্য মানুষের খুশি হওয়ার উপাদান রয়েছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যের কথাও বলা হয়েছে। দেশীয় শিল্প সংরক্ষণে রয়েছে নানা পদক্ষেপ।
অন্যদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছর আগে দেওয়া এই বাজেটে কালো টাকা ঢালাওভাবে সাদা করার সুযোগ রাখার প্রস্তাব রেখেছেন অর্থমন্ত্রী, যার সমালোচনা ছিল দীর্ঘদিন ধরে; এমনকি অর্থমন্ত্রী নিজেকে এর বিরোধী বলে দাবি করলেও তারই স্বীকারোক্তি- অনেক কিছুর সঙ্গেই সমঝোতা করতে হয়।
বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী, যা চলতি অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার আশা করা হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটের সঙ্গে চলতি বা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। ২০১১-১২ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, তা কমিয়ে ১ লাখ ৬১ হাজার ২১৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
গত কয়েকবারের মতো বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতেই বাজেট উপস্থাপন করেন মুহিত। ছিলেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মহাজোট শরিক দলগুলোর নেতারা।
অর্থমন্ত্রী সংসদ অধিবেশনে উপস্থাপনের কিছু সময় আগেই সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই বাজেট অনুমোদন হয়।
বরাবর অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার পুস্তিকায় আলাদা কোনো শিরোনাম না থাকলেও এবার তাতে ‘তিনটি বছরের খতিয়ান : আগামীর পথ রচনা’ এই শিরোনাম দেখে যে কেউ নির্বাচনী বাজেটের গন্ধ খুঁজতে পারেন। ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সরাসরিই বলেছেন, এটি নির্বাচনমুখী বাজেট।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে মোট বরাদ্দের ২৪ দশমিক ২ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়িয়ে তাতে প্রথমবারের মতো অনগ্রসর জনগোষ্ঠী দলিত, হরিজন, বেদে ও হিজড়াদের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
মুহিত বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি, দেশের যে সব জনগণ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে, তাদের সেখান থেকে তুলে আনতে।”
ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের খুশি রাখতে দেশীয় শিল্প রক্ষায় নানা পদক্ষেপ রয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাবও রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন বাজেটে দেশীয় শিল্পকে যথেষ্ট সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে, এটা খুবই ইতিবাচক। অন্যদিকে সামাজিক সুরক্ষা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নারীদের উন্নয়নেও বরাদ্দ বাড়ানোসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
দীর্ঘ বাজেট বক্তৃতায় কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে কিছুই বলেননি অর্থমন্ত্রী। তবে বাজেট বক্তৃতার শেষে তিনি সংসদে যে অর্থ বিল উপস্থাপন করেছেন, তাতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগের কথা বলা হয়েছে।
এতে কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ১০ শতাংশ হারে জরিমানা দিয়ে যে কোনো খাতে কালো টাকা সাদা করা যাবে।
এই পদক্ষেপ অনেককে খুশি করলেও সমালোচনা করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের বক্তব্য, নির্বাচনের আগে এটি দুর্নীতির কাছে শাসক দলের ‘রাজনৈতিক আত্মসমর্পণ’।
অর্থমন্ত্রীর ইচ্ছা ছিল বাজেটের আকার আরো বড় করার, কিন্তু সাধ্য যে ছিল না- তা নিজেই স্বীকার করেছেন।
বাজেট বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “আমি চুপিচুপি বলি, আমার ইচ্ছা ছিল ২ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেব। কিন্তু সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে তা না করতে পেরে ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার বাজেট দিচ্ছি।”
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান হিসেবে ধরলে এই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪৬ হাজার ২৪ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে অনুদানব্যতীত ঘাটতি ছিল ৪৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ৪৬ হাজার ২২৮ কোটি টাকা করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ১০ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা নেওয়া হবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে আসবে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উৎস থেকে নিট ঋণ নেওয়া হবে ১২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর বৈদেশিক উৎস থেকে ২০ হাহার ৩৯৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে। এর মধ্যে ৭ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা যাবে আগের নেওয়া ঋণ সুদ-আসলে পরিশোধে।
গত অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করলেও বছর শেষে তা ২৯ হাজার ১১৫ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
চলতি অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণের সমালোচনা করে আসছিল বিরোধী দলসহ ব্যবসায়ী মহলও। তাদের বক্তব্য, সরকার ঋণ বেশি নেওয়ায় বেসরকারি খাত যথেষ্ট অর্থ পাচ্ছে না।
ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎসের দিকে সরকারের এই নজর ভালো চোখে দেখছে না ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা। বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রার প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রীর কাছে।
ঘোষিত বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, এই বাজেট বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য । অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন বলেছেন, নতুন বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য।
মির্জ্জা আজিজের সংশয় বাজেটের অর্থায়ন নিয়ে। তার মতে, অর্থমন্ত্রী বাজেটে যে সব উৎস থেকে অর্থ আসবে বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, সে সব খাত থেকে প্রত্যাশিত অর্থ আসবে না।
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মির্জ্জা আজিজ।
চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭ শতাংশ। অবশ্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অর্থবছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) হিসাব ধরে জিডিপির যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে ৬ দশমিক ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার ধারণা দেওয়া হয়েছে।
ফরাসউদ্দিন বাজেটের সব দিকের প্রশংসা করলেও সব রপ্তানি পণ্যের উৎস করের হার বাড়িয়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখার বিরোধিতা করেছেন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমও এই হার পুনর্বিবেচনার জন্য অর্থমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের ভাষায়- নতুন বাজেটে সুসংবাদ বা দুঃসংবাদ দুটোর কোনোটিই নেই। তার মতে, ধারাবাহিকতা রক্ষার একটি বাজেটই দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী; যা কি না নির্বাচনমুখী মনে করছেন মহাজোটের আরেক নেতা এরশাদ।
No comments:
Post a Comment